সাইবার নিরাপত্তায় ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহারে সতর্কতা ও করণীয়

সাইবার নিরাপত্তায় ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহারে সতর্কতা ও করণীয়

তথ্যপ্রযুক্তির এই ক্রমবর্ধমান উন্নতি, প্রচার, প্রসার ও ব্যবহারের যুগে মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরণের তথ্য এবং সেবা পৌছে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসে পড়াশোনা থেকে শুরু করে পণ্য ক্রয় বিক্রয়, ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা, ভিডিও কলে কথা বলা, বাসার ইউটিলিটি (বিদ্যুত, পানি, গ্যাস) বিল পরিশোধ করা, এমনকি দৈনন্দিনের কাঁচাবাজার পন্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারছেন।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য ও সেবা পাওয়ার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন থাকলেও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ওয়েব ব্রাউজার, যা প্রায় প্রত্যেক কম্পিউটার এ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্সটল্ড (Installed) থাকে। বিভিন্ন ধরনের ওয়েব ব্রাউজার থাকলেও বহুল ব্যবহৃত ও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মজিলা ফায়ারফক্স (Mozilla Firefox), গুগল ক্রোম (Google Chrome), অ্যাপল সাফারি (Apple Safari), অপেরা (Opera), ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer), মাইক্রোসফট এজ (Microsoft Edge) ইত্যাদি।

ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্য ও সেবা পাওয়ার জন্য যেহেতু ওয়েব ব্রাউজার অধিক ব্যবহার করা হয় তাই ওয়েব ব্রাউজার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদে ব্যবহার করা অতি জরুরী। কম্পিউটার এর অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যে ওয়েব ব্রাউজার গতানুগতিকভাবে দেয়া থাকে অথবা আমরা যে ওয়েব ব্রাউজার ইনস্টল (Install) করি, সাধারণত তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থাকে না।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে এবং ওয়েব ব্রাউজার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে, খুব সহজেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ম্যালওয়্যার বা অন্যান্য ক্ষতিকর প্রোগ্রাম, ব্যবহারকারীর অগোচরে তার কম্পিউটার এ অনুপ্রবেশ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা ব্যবহারকারীর কম্পিউটার এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হতে পারে।

ওয়েব ব্রাউজার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু করণীয় নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১) প্রতিটি ওয়েব ব্রাউজার এ প্রাইভেসি সেটিংস থাকে। ব্যবহারকারীকে এই সেটিংসগুলো ভালো করে পর্যালোচনা করে কনফিগার (Configure) করা যাতে করে ব্রাউজার এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।

২) সবসময় ওয়েব ব্রাউজার হালনাগাদ (Update) রাখা।

৩) ওয়েব ব্রাউজার এর প্লাগ-ইনস (Plug-ins), অ্যাডঅনস (Add-ons) এবং এক্সটেনশনস (Extensions) ডাউনলোড করার সময় সচেতন থাকতে হবে যাতে ক্ষতিকর প্লাগ-ইনস, অ্যাডঅনস বা এক্সটেনশনস ইনস্টল না হয়ে যায়।

৪) ব্যবহৃত প্লাগ-ইনস সমূহ হালনাগাদ রাখা এবং অব্যবহৃত ও অপ্রয়োজনীয় প্লাগ-ইনস আনইনস্টল (Uninstall) করা।

৫) সর্বদা সক্রিয় ও হালনাগাদ অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করা।

৬) বিভিন্ন ধরনের ওয়েব ব্রাউজার সিকিউরিটি প্লাগ-ইনস ব্যবহার করা এবং অপ্রত্যাশিত পপআপ (popup) বাধা প্রদানকারী এক্সটেনশনস (Extensions) ব্যবহার করা। যেমন, এ্যডব্লক প্লাস (Adblock Plus) এক্সটেনশন।

৭) ৩২-বিট প্রোগ্রাম এর চাইতে ৬৪-বিট প্রোগ্রাম এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ৬৪-বিট এর ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করা।

 

সাইবার আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহারকারীর জন্য কিছু সতর্কতা আলোচনা করা হলো।

১) ওয়েব ব্রাউজার এ কখনোই পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা ঠিক নয় কারণ যদি ব্যবহারকারীর কম্পিউটার কখনো ভাইরাস, ম্যালওয়্যার বা অন্যান্য ক্ষতিকর প্রোগ্রাম দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে সাইবার অপরাধী যে কোন সময় সেই পাসওয়ার্ড পেতে পারে। এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহারকারী নিরাপদ কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন যেমন, কীপাস পাসওয়ার্ড সেফ (KeePass Password Safe)

২) ওয়েব ব্রাউজার এর ব্রাউজিং হিস্টোরি (Browsing history) এবং ক্যাশ (Cache) মুছে ফেলা।

৩) ওয়েব ব্রাউজার এর অটোফিল (Autofill) সুবিধা নিষ্ক্রিয় রাখা যাতে করে ওয়েব ব্রাউজার এ ব্যবহারকারীর কোন তথ্য সংরক্ষিত না থাকে।

৪) ব্যবহারকারী যদি সাইবার ক্যাফে বা অন্যের কোন কম্পিউটারের ওয়েব ব্রাউজার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তবে ওয়েব ব্রাউজার এর ইনকগনিটো মোড (Incognito mode) ব্যবহার করা যাতে করে ব্যবহারকারীর কোন তথ্য ওয়েব ব্রাউজার এ সংরক্ষিত না থাকে।

সকলের সাবধানতা এবং সচেতনতাই পারে নিরাপদ সাইবার পরিবেশ তৈরী করতে।

 

রেফারেন্সঃ

 


মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম,

আইটি কনসালটেন্ট,

বিজিডি ই-গভ সার্ট

Share