শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তা বাড়াতে করনীয়

শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তা বাড়াতে করনীয়

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হল এক ধরনের প্রযুক্তি যা ভার্চুয়াল সম্প্রদায় এবং নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য, কর্মজীবনের বিভিন্ন তথ্য ও ধারণা, ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের মত প্রকাশ ও বিভিন্ন  তথ্য ভাগাভাগি(share) করতে সাহায্য করে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইবার নিরাপত্তা যদি নমনীয় থাকে তাহলে সাইবার অপরাধীরা এর অপব্যবহার করে ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠান এর অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করতে পারে। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ বয়সে কিশোর- কিশোরী যারা “ অল্প সময়ে কিছু একটা করে দেখানোর মনোভাব নিয়ে থাকে” ফলে অনেক সময় সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পড়ে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যা অনেক সময় জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই প্রবন্ধে আমারা শিশু-কিশোরদের  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুরক্ষা বাড়াতে করনীয় সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। সাইবার সচেতনতা  বৃদ্ধির  লক্ষ্যে এই প্রবন্ধটি তৈরি করা হয়েছে।

অনেক সামাজিক নেটওয়ার্কের অ্যাকাউন্ট সৃষ্টি(create) করতে হলে নির্দিষ্ট বয়সের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই নিয়ম কে সম্মান করতে হবে, নির্দিষ্ট একটি বয়স না হলে, এই ধরনের সামাজিক নেটওয়ার্কের অ্যাকাউন্ট সৃষ্টি করা ঠিক হবে না এবং উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের  অভিভাবকগন প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন।

অনেক সময় সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা শিশুদের বিভিন্ন ছবি  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে শেয়ার করা ছবি যাতে ব্যবহারকারীর অতি ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত মানুষের মাঝে হয়। যদি পাবলিক শেয়ার হয় বা সবার জন্য উন্মুক্ত হয়, অনেক ক্ষেত্রে শিশুনিগ্রহকারিরা এই ছবি চুরি করে তাদের বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করতে পারে। শিশুদের ছবি শেয়ার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া উচিত।

যদি কোন শিশু-কিশোরদের  সামাজিক নেটওয়ার্কের অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, অধিকাংশ সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সেটিংস্‌, প্রোফাইল ডিফল্ট থাকে যা হয়ত সবার জন্য উন্মুক্ত, এই ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের  অভিভাবকদের উচিত হবে সেই অ্যাকাউন্টের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সেটিংস্‌, প্রোফাইলে যাতে সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা থাকে তার বাবস্থা করা। অনেক সময় শিশু-কিশোরদের  অভিভাবকরা তাদের সন্তানের সামাজিক মিডিয়া কার্যকলাপ চেক করতে পারেন বা “অনুসরণ” করতে পারেন, যাতে করে তাদের সন্তানকে সামজিক ও নৈতিকতা বোধ শিক্ষা দেয়া যায়, যাতে করে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের বুঝতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়।

অভিভাবকদের উচিত নিচের বিষয়গুলি তাদের সন্তানদের ভাল করে বুঝানো যেমনঃ

১)তারা যাতে কখনও নিজেদের পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার না করে, হোক না সে সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু

২)সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা, কীভাবে কঠিন পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা ও কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা

৩)অপরিচিত কারো বন্ধুত্ব গ্রহণ না করা

৪)বাক্তিগত তথ্য যেমন, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, বাড়ীর ঠিকানা, লোকেশন যাতে না দেয়

৫) শিশু-কিশোরদের  প্রোফাইল থেকে যাতে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানজনক পোস্ট দেয়া হয় বা শেয়ার করা হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা ও পোস্ট বা শেয়ার যাতে সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখা

৬) অপরিচিত সোর্স হতে কোন লিঙ্কে ক্লিক না করে, পাইরেট সফটওয়্যার বা অ্যাপ ব্যবহার না করে, সব সময় সক্রিয় ও হালনাগাদ অ্যান্টি-ভাইরাস সিকিউরিটি স্যুট ব্যবহার করা

৭) অনেক সময় শিশু-কিশোররা স্মার্টফোনে অপরিচিত উৎস হতে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে, যা অনেক সময় স্মার্টফোনের বিভিন্ন ফোল্ডার (ছবি,ডকুমেন্ট,লোকেশান ইত্যাদি) অ্যাক্সেস করতে চায় যা হয়ত এই অ্যাপ ব্যবহার করবার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এসব ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। সবসময় অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর হতে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত।

৮) আপনার সন্তান যদি সাইবার বুলিং(cyberbullying) এর শিকার হয় যেমন অনলাইনে (গেম খেলতে গিয়ে বা বিশেষ ওয়েবসাইটে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে) বিরূপ মন্তব্যের ,গালাগালি, বর্ণবাদী, অভদ্র বা অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ, যৌনতা বিষয়ক মন্তব্যের শিকার হয় যা আপনার সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যা অনেক সময় সন্তানকে হতাশায় নিমজ্জিত করতে পারে,লেখাপড়ার- খেলাধুলার  প্রতি অনীহা হতে পারে এমনকি ইনসমনিয়া থেকে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার সন্তান  সাইবার বুলিং(cyberbullying) এর শিকার হচ্ছে বা হয়েছে, তবে আপনি যে (অপরাধী) সাইবার বুলিং করছে, তাকে প্রতি-উত্তর(reply) দিবেন না, অপরাধীর আইডি রিপোর্ট করুন ও ব্লক করু এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান। সন্তানকে মানসিক ভাবে উজ্জিবিত  রাখুন যাতে সে মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়ে ও হতাশাগ্রস্থ না হয়।

আমাদের সকলের সতর্কতা এবং সাবধানতাই পারে একটি নিরাপদ সাইবার পরিবেশ তৈরী করতে।

 


দেবাশীষ পাল,

ইনফরমেশন সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট,

বিজিডি ই-গভ সার্ট

Share